বোস হাউস ক্যাম্পাস : কিছু বিশেষত্ব

স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্ন ছিল ভারতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী বৈদান্তিক জ্ঞানপরম্পরা সাথে পশ্চিমের আধুনিক বিজ্ঞানের মেলবন্ধন। ক্রান্তদর্শীর এই ভাবনাকে দিশা করে বিশ্বায়নের এই যুগে এই ক্যাম্পাস থেকে অনলাইন, অফলাইন ও হাইব্রিড মাধ্যমে শুরু হয়েছে এক ঝাঁক কোর্স যার মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান হেরিটেজ স্টাডিজ থেকে শুরু করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর মত বৃত্তিমুখী নানান প্রশিক্ষণ।

  • কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে পাঠক্রমে কম্পিউটার এবং ভাষা শিক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আজকের দিনের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে আয়োজন করা হয়েছে জেরিয়াটিকেয়ার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, অ্যাপ্লায়েড টেকনিকস্ অফ কাউন্সিলিং এন্ড সাইকোথেরাপি এর মতন যুগোপযোগী নানান বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে এগুলিতে প্রশিক্ষণার্থীরা পেয়ে যাচ্ছেন সরাসরি ক্যাম্পাসিং-এ বসার সুযোগ।
  • ট্রেস, ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটির মত মানসিক ব্যাধি আজকের দিনের সমাজের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংকট। শিক্ষার্থী থেকে চাকরিজীবী সকলেই আজ এর শিকার। এর পরে রয়েছে অবসর জীবনের অবসাদ। আজকের দিনের এই যুগসংকটের কথা মাথায় রেখে এই ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়েছে স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং এর মত কোর্সগুলি। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে শুরু হয়েছে অটিজম : অ্যাসেসমেন্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক কোর্সগুলি। ছাত্র-ছাত্রীদের সফল ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ব্যক্তিত্বের বিকাশ ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তারই প্রশিক্ষণ দিতে শুরু হয়েছে পার্সোনালিটি ডেভলপমেন্ট।
  • ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টের কোর্সগুলি একদিকে যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে অন্যদিকে তেমনি এর মাধ্যমে খুলে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। বিশেষত ক্রিয়েটিভ আর্টের কোর্সগুলি ভীষণভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পথকে প্রশস্ত করে দিচ্ছে আগামী প্রজন্মের জন্য।
  • সর্বোপরি ভারতবর্ষের ধ্রুপদী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে প্রশিক্ষণার্থীদের প্রত্যয়ী করতে শুরু হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : ঐতিহ্য ও আধুনিকতার আলোকে, ইন্ডিয়ান ফিলোসফি : বেদান্ত, যোগা : বডি - মাইন্ড মেডিসিন, গৃহীর আদর্শ মা সারদা এজাতীয় কোর্সগুলি। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ঐতিহ্যের প্রতি গড়ে উঠছে শ্রদ্ধা অন্যদিকে তেমনি ব্যক্তিজীবনের এডজাস্টমেন্ট এবং কর্মজীবনের প্রফেশনাল এথিক্সেরও শিক্ষা প্রশিক্ষণার্থীরা এখান থেকে লাভ করছেন।
  • নতুন শিক্ষানীতি (NEP '20)তে ভীষণভাবে গুরুত্ব পেয়েছে ইন্টার্নশিপের প্রসঙ্গ। এই ক্যাম্পাস থেকে ক্রিয়েটিভিটি, ব্লগিং এন্ড ইউটিউব স্কিল, ট্রান্সলেশন স্টাডিজ, এক্সপ্লোরিং আলপনা এরকম নানান বিষয়ের ওপর শুরু হয়েছে বৃত্তিমূলক ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম।
  • ইউজিসি মাল্যব্য মিশন টিচার ট্রেনিং সেন্টার (MMTTC) সাথে সংযুক্ত ভাবে বোস হাউস ক্যাম্পাস ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ করেছে ইন্দোলজি এন্ড ইন্ডিয়ান হেরিটেজ বিষয়ের উপর ১৫ দিনের একটি টিচার ট্রেনিং প্রোগ্রাম।
  • এই ক্যাম্পাসের উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষা ও সংস্কৃতি মূলক কর্মশালা, সেমিনার এবং মূল্যবোধ ভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলি একদিকে যেমন স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অন্যদিকে তেমনি এর মাধ্যমে প্রসারিত হচ্ছে মূল্যবোধের শিক্ষা।
  • বিদ্যামন্দিরের NSS বিভাগের উদ্যোগে এখান থেকে আয়োজিত সচেতনতামূলক কর্মশিবির এবং রিলিফ এর কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সহায়ক হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের দিন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমৎ স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ এই ক্যাম্পাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন যে, এই ক্যাম্পাসের অভিনবত্ব হল এটি একটি সহ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে মেয়েরাও পড়াশোনা করবে। স্বামীজী বলেছিলেন, একটি পাখির দুটি পাখা থাকে। দুটি পাখাই যদি সমানভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং সশক্ত না হয়, তাহলে পাখিটি ভালভাবে উড়তে পারে না। সমাজের দুটি পাখা আছে পুরুষ এবং নারী। দুজনেই যদি সমমর্যাদা সম্পন্ন না হয় তাহলে সেই সমাজের উন্নতি উর্ধ্বায়িত হয় না। স্বাভাবিকভাবেই রামকৃষ্ণ মিশন গভর্নিং বডি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে অনাবাসিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে এখানে ছেলেরাও আসবে মেয়েরাও আসবে তাদের জীবনের উৎকর্ষের জন্য।